যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার (১৩ আগস্ট) কাশিমপুর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাতে বিএসএমএমইউ-এ আনা হয় তাকে।তাকে বিএসএমএমইউর কার্ডিওলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউর ডি ব্লকের দ্বিতীয় তলার সিসিইউ-২ এর ৬ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন। বিএসএমএমইউ-এর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমকে জানান, এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে নতুন একটি অ্যাটাক পাওয়া গেছে। তবে এই অ্যাটাকের জন্য রিং লাগবে কিনা- তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মোস্তফা জামান বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলাম ওনার হার্টে একটা অ্যাটাক হয়েছে। কিন্তু এখনো পুরোপুরিভাবে বলা যাচ্ছে না অবস্থা কোন দিকে যাবে। আগেই ওনার স্টেন্ট (রিং) লাগানো আছে। এখনো তাকে ইমার্জেন্সিতে রাখা হয়েছে। ওনার ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। এর আগে রবিবার দুপুরে কারাগারে বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে কারা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাঈদীর বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে আনা হয়। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তার কিছু সমস্যা ছিল। তার বুকে ব্যথা, হার্টে সমস্যা, প্রেসার ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যাও আছে। ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলেন, আপনারা জানেন আমার বাবার হার্টে পাঁচটি রিং পড়ানো ছিল। কারাগারে তিনি অসুস্থ হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার দায়িত্ব চিকিৎসকরা তাকে ঢাকাতে রেফার্ড করেন। উনাকে এখন এই পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উনি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান আছেন। তবে চিকিৎসকরা এখনো অফিসিয়াল ভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। আন-অফিসিয়ালি ভাবে জানতে পেরেছি তিনি মাইন্ড স্ট্রোক করেছেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দু’টি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি ওই মামলায় সাজাভোগ করছেন। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।