নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি :

পিরোজপুরের নেছারাবাদে বাবার সামনে শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে মিঠু খরাতি (১৪) নামের অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রের বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে সে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে উপজেলার সমুদয়কাটি ইউনিয়নের দুর্গাকাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মিঠু খরাতি একই গ্রামের মতিলাল খরাতীর ছেলে ও দুর্গাকাঠি এস.জি.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র।জানা যায়, মঙ্গলবার দুর্গাকাঠি এস.জি.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুল চলাকালীন সময়ে মধ্য বিরতিতে খেলার ছলে সহপাঠীদের একে অপরের গায়ে ধুলা (ছাই) নিক্ষেপ করতে দেখে অফিস সহায়ক মিল্টন মজুমদার। তাৎক্ষণিক সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মিঠু খরাতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে লাইব্রেরীতে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে লাইব্রেরীর অফিস কক্ষে বসে সহকারী শিক্ষক পার্থ শীল ও অফিস সহায়ক মিল্টন মজুমদার ওই ছাত্রকে বেত দিয়ে বেদম পিটিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে খবর দিয়ে স্কুলে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীর বাবা স্কুলে আসলে ওই শিক্ষক ও অফিস সহায়ক এক পর্যায়ে বাবার সামনে তাকে বকাঝকা করে। তাৎক্ষণিক স্কুলের শিক্ষকদের সামনে মতিলাল তার ছেলেকে শাসন করে তিনি বাড়িতে নিয়ে যান ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে। বাড়িতে গিয়ে বাবার সামনে  শিক্ষক ও অফিস সহায়কের অপমান সইতে না পরে ঘরে থাকা জমিতে প্রয়োকৃত কীটনাশক পান করে ওই শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই একটু দুষ্ট প্রকৃতির। গত মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে আবার স্কুলে চলে যায়। হঠাৎ স্কুলের অফিস সহায়ক মিল্টন মজুমদার আমাদের বাড়িতে এসে তার বাবাকে স্কুলে যেতে বলে। স্কুলে গিয়ে আমার ছেলে দুষ্টামি করেছে বলে ছেলের বাবার সামনে ছেলেকে বকাঝকা দেয়। শুনেছি ওর বাবা যাবার পূর্বে ছেলেকে বেত দিয়ে বেদম পিটিয়েছে। তাই বাড়িতে এসে রাগে অভিমানে ক্ষেত খামারে ছিটানো কীটনাশক খেয়েছে আমার ছেলে। বাবার সামনে ছেলেকে অপমান করায় ছেলে আমার বিষ খেয়েছে। শিক্ষক পিটালে মেনে নিতাম কিন্তু অফিস সহায়ক কোন অধিকারে আমার ছেলেকে পিটিয়েছেন আমি এর বিচার চাই।এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মিল্টন মজুমদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।অন্য অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক পার্থ শীল বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে তার ছাত্রকে শাসন করতেই পারি। ছেলেটি দুষ্ট স্বভাবের কিছুদিন আগেও একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। সেটার বিচার করা হয়নি। শাসন না করলে এই ধরনের ছাত্ররা বখাটে হয়ে যায়।এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, মিঠু খরাতী নামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কীটনাশক খেয়ে একজন রোগী এসেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।দুর্গাকাঠি এস.জি.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সবিতা রানী হাওলাদার বলেন, আমি অসুস্থতা জনিত কারণে ঐদিন স্কুলে ছিলাম না। শুনেছি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মিঠু খরাতীকে প্রথমে শিক্ষকরা শাসন করেছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষকদের সামনে তার বাবাও ওই শিক্ষার্থীকে জুতো পিটা করেন।পরে সে বাড়িতে গিয়ে বিষপান করেছে। শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা করানোর জন্য বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক সর্বদা তার সাথে আছেন।নেছারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, স্কুলে বসে শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটানোর বিধান নেই। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া পিটানোর অপরাধে যদি ওই স্কুল ছাত্রটি আত্মহত্যার জন্য বিষপান করে থাকে সেটা রীতিমত লজ্জাজনক। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বনি আমিন জানান, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।