বিয়ের তিনদিন আগে পাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন হালিম সিকদার (৪৫) নামের এক ঘটক। ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে অনত্র বিয়ে দেওয়া হয়। গত এপ্রিল মাসে ঝালকাঠির রাজাপুর সদর ইউনিয়নের এক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।সম্প্রতি ওই নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে স্বামীর মনের সন্দেহ হয় এবং স্ত্রীর কাছ থেকে আসল সত্য উন্মোচন করেন।পরে তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে সাংবাদিকদের কাছে ওই নববধূ এ অভিযোগ করে অভিযুক্তের বিচার ও গর্ভের সন্তান রক্ষা এবং তার পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। অভিযুক্ত ও তার স্বজনরা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে এ ঘটনা রফাদফা করে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।ভূক্তভোগী ওই ছাত্রী উপজেলার মধ্য ফুলুহার মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত ওই ছাত্রী। বিয়ের বয়স না হওয়ায় রোটারী পাবলিক করে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।অভিযুক্ত হালিম দুই সন্তানের জনক ও উপজেলার বড় কৈবর্তখালি গ্রামের মৃত আজিজ সিকদারের ছেলে।তিনি পেশায় গাছ ব্যবসায়ী পাশপাশি এলাকায় ঘটকালী করে।উপজেলা শহরের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ওই নববধূ অভিযোগ করে জানান, ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে বিয়ের ৩ দিন আগে গত ২১ এপ্রিল ঘরের দরজা ভেঙে তার রুমে নিয়ে ঘটক হালিম তাকে ধর্ষণ করে এবং কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়।বিষয়টি ঘটনার দিন নানা ও নানিসহ স্বজনদের জানালে তারা আমলে নেয়নি এবং চুপ থাকতে বলে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার তিনদিন পর ওই ঘটকের মাধ্যমে ঠিক হওয়া এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয় ওই কিশোরীর।বিয়ের বয়স না হওয়ায় রোটারী পাবলিক করে উপজেলার ছোট কৈবর্তখালি গ্রামের নুরুজ্জামানের সাথে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করে স্বামী বাড়িতে তুলে দেয়া হয় ওই ছাত্রীকে।বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পরলে স্বামীর মারধর ও পরিবারের চাপে পরে হালিম কতৃক ধর্ষণের বিষয়টি স্বামী ও তার স্বজনদের জানাতে বাধ্য হন ওই নববধূ। এরপর নববধূর নানাসহ বাড়ির লোকজন গিয়ে ওই নববধূকে বাড়িতে এনে উপজেলার শহরের ২টি ক্লিনিকে ১৫ জুন ও ১৮ জুন আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে ৮ সপ্তাহ ৪ দিনের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পরে এবং ধর্ষণের বিষয়টি ওই নববধূর কাছ থেকে জানতে পেরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বললে সোমবার সকালে স্থানীয় একটি মহল অভিযুক্ত হালিম সিকদারসহ উভয় পক্ষকে ডেকে নববধূকে চাপ প্রয়োগ করে ২ লাখ টাকায় রফাদফার চেষ্টা করলে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।লোকলজ্জা আত্মীয়স্বজনের সমঝোতার চাপে বাধ্য হয়ে সোমবার দুপুরে ওই নববধূ উপজেলা শহরের এক আত্মীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ওই নববধূ ৬৯ দিনের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে উপজেলা শহরের এক নিকটাত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেন।সেখানে সাংবাদিকরা গেলে ওই নববধূ হালিমের বিচার দাবি করেন ও গর্ভের সন্তান রক্ষা এবং তার পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি জানান। ওই ছাত্রীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,মহিলা অধিদফতর ও ব্র্যাকসহ সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।স্থানীয় ইদ্রিস ফরাজি জানান,বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ তার কাছে গিয়েছিল।বিষয়টি শুনে এটি তিনি এ বিষয়টি সালিশ মিমাংসা করা সম্ভব না বলে জানিয়ে দেয়। দোষী ব্যক্তির আইনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি কোন শালিশ বা সমঝোতার চেষ্টা করেননি।এ বিষয়ে অভিযুক্ত হালিম সিকদারের বক্তব্যের জন্য মোবাইলে কল দিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নিজে দোষী না দাবি করে সামানাসামনি কথা বলবেন বলে জানান। পরবর্তীতে তাকে কল দিলে তিনি রিসিভ না করে নম্বর বন্ধ করে রাখেন।এ বিষয়ে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান,এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বা জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।