জলেতে বিছানো সবুজ পাতার বিছানা ভেদ করে মাথা উচু করে দাড়িয়ে লাল,সাদা বাহারি রঙের পদ্মফুলে ছেয়ে গেছে সোনাকান্ত বিল। জলেতে ছবির মতো ভাসমান সাজানো বিছানো হৃদয়কাড়া প্রতিটি পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য শোভা সমারোহে অভিভুত ও মোহিত করে যে কোন বয়সী মানুষকেই। লাল-গোলাপী-সাদা রঙের বাহারি পদ্মফুল উঠাতে জলেতে নেমে মনের অজান্তেই অনেকে মেতে ওঠেন দুরন্ত শৈশবে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সোনাকান্ত পদ্মবিলের শোভিত দৃষ্টিনন্দন এই লাল,সাদা বাহারি রঙের পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভিড় করছে আশপাশের ও দূর দুরান্ত থেকে আসা পদ্মপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীরা। এখানে বেড়াতে এসে প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধহয়ে অনেকেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে অপরুপ সৌন্দর্যের মায়াজালে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মনেয়া অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত বিলটির অবস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামে সোনাকান্ত বিল নামেই পরিচিতি। এলাকাবাসীরা জানায়, উল্লাপাড়া উপজেলার আমডাঙ্গা,সড়াতৈল,অলিপুর ও বাগধা গ্রামবাসীদের প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর প্রাকৃতিক ভাবেই গোড়ে উঠেছে এই সোনাকান্ত বিল। এই বিলে থাকা এসব জমিতে বছরে মাত্র একবার বোরো ধান চাষ হয়। জমিগুলো অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমসহ বছরের প্রায় ৭ মাসেরও বেশি সময় এখানে পানি জমে থাকে। বর্ষাকালে এ সোনাকান্ত বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্ম নেয়। চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ন এলাকাজুড়ে লাল-গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্ম দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। প্রতিদিন এই সোনাকান্ত পদ্মবিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে অপার সৌন্দর্যকে ফ্রেমবন্দি করতে অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করে থাকে। এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা এই বিলের পদ্মফুল সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকে। প্রতিটি পদ্মফুল ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। দর্শনার্থী অনেকেই অতি প্রছন্দের বাহারি রঙের এই ফুল ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় পদ্ম ফুল বিক্রেতা শিশু মনির,মাহি, জয়নবসহ অন্যান্যরা জানায়, প্রতিদিন পদ্ম গাছের কাঁটার আঘাত সহ্য করে তারা ফুল সংগ্রহ করে। এসব ফুল তারা বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে পিতা-মাতাকে সহায়তা করে থাকে। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র এই দুই মাস তারা ফুল তুলতে পারবেন। এতে বিলের মালিকেরা কোন সময়ও বাঁধা দেয় না বলে জানিয়েছে পদ্মফুল সংগ্রহকারী শিশুরা।শুক্রবার (১১ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ শহরের হোসেনপুরের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থী মারিয়া মেহজাবীন বলেন, আমাদের মাতৃভূমি এই রূপসী বাংলায় অনেক স্থানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গ্রামবাংলার অনেক ইতিহাস,লোক সংস্কৃতি,ঐতিহ্য বা সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান। যা দেখতে আসা অনেকেরই সম্ভব হয় না। গত বছর পরিক্ষার কারণে আসতে পারেন নাই বলে এবার তিনি এই বিলে বাহারি রঙের পদ্মফুল দেখার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে বেড়াতে এসেছেন। পদ্ম ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বিলে যাতায়াতের কোন রাস্তা ও নৌকা না থাকায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তবে বিলে নৌকার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো লাগতো বলে জানান সকলে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শামীমুর ইসলাম বলেন,দুই বছর হলো বর্ষায় উপজেলার সোনাকান্ত বিলে পদ্ম ফুলের দেখা মিলছে। পদ্ম ফুলে ঔষধি গুণাগুণও অনেক।কৃষি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় শাপলা ও পদ্মের দেখা মিলছে। কৃষক জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে দিলে এই ফুল বিলুপ্তির হাত থেকে ফিরে আসবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান,এটি জলজ উদ্ভিদ। পাখির দ্বারা পদ্ম ফুলের বীজ বিলে পড়ে গাছ জন্মায় এবং সেখান থেকেই পদ্ম গাছের বিস্তৃতি হয়। সোনাকান্ত বিল এবছর পদ্ম ফুলেছেয়ে গেছে। অনেক দর্শনার্থী এ বিলে আসছেন। বিলটি এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।