ময়মনসিংহের ফুলপুর ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামি মো. নূরুল ইসলাম ওরফে নূরু (৭৬)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সঙ্গীয় এএসআই সহিদুল ইসলাম, এএসআই রতন চৌধুরী ও এএসআই সুমন মিয়াকে নিয়ে হালুয়াঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাত দেড়টার দিকে হালুয়াঘাট উপজেলার মাজরাকুড়া গ্রামের জনৈক আব্দুল আলিমের বসত ঘর হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নুরু ফুলপুর উপজেলার ৩নং ভাইটকান্দি ইউনিয়নের গায়রা গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিন ও মৃত নবীজান খাতুনের পুত্র। প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তার সম্বন্ধে ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নুরু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারী পরোয়ানাভূক্ত আসামী। ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে ICT-BD (ICT-1) Miss.Case No.01/2022.Under Section 3 of the International Crimes (Tribunals) Act,1973.ফুলপুর থানার সিআর রেজিস্টার রিসিভ নং-০৭/২০২৩, যুদ্ধাপরাধ মামলা রজু হওয়ার পর থেকে তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ ঢাকা ও বিভিন্ন এলাকায় পলাতক ছিলেন। গত ৩দিন পূর্বে নুরু হালুয়াঘাটের মাজরাকুড়া গ্রামে তার আত্মীয় বাড়িতে আসলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে রাত দেড়টার দিকে ফুলপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, মো. নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনসহ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফুলপুর থানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা মামলাসূত্রে প্রকাশ, ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর, বাংলা ১৩৭৮ সনের ২৬ আশ্বিন রোজ বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুসহ ১৫-২০ জন সশস্ত্র রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীকে আটক করার জন্য ফুলপুর থানাধীন দেউখালি গ্রামে তার বাড়িতে হামলা করে। আসামীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসান আলী আত্মরক্ষার জন্য বাড়ির পশ্চিম দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আসামীরা তখন তার তাকে পিছু পিছু ধাওয়া করে গাজী মুন্সির বাড়ি সংলগ্ন জঙ্গল হতে তাকে আটক করে। আসামি মো. নুরুল ইসলাম ওরফে নূরু ভিকটিম হাসান আলীকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক ভাইটকান্দি বাজারের নিকট রাখা একটি গাড়িতে তুলে ফুলপুর রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ৬দিন ফুলপুর রাজাকার ক্যাম্পে হাসান আলীকে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতনের পর ১৯৭১ সনের ১৯ অক্টোবর ভোর রাতে সর্চাপুর ঘাটে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ কংস নদীতে ফেলে দেয়। এছাড়া ১৯৭১ সনের ২৭ নভেম্বরে শেরপুরের নকলা থানাধীন নারায়নখোলা স্কুলে স্থাপিত পাকিস্তানী ক্যাম্পে সুফিয়া খাতুন নামে এক নারীকে ধরে নিয়ে তিন রাত দুই দিন আটক রেখে আসামি নুরুল ইসলাম ওরফে নূরুসহ পাকিস্তানি আর্মিরা পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। ধর্ষণের ফলে সুফিয়া খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়লে আসামিরা তাকে ২৯ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি আর্মির গাড়িতে করে নকলা থানাধীন বিবিরচর রাস্তার উপর কালভার্টের নিকট ফেলে রেখে যায়। লোকমুখে সংবাদ শুনে সুফিয়া খাতুনের পিতা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ফুলপুর ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত আসামী মো. নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুকে বিধি মোতাবেক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, ফুলপুর থানার এই চৌকস ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে এর আগে চলতি ২০২৩ সনের ২৫ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আসামী ফুলপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম বাখাই গ্রামের মৃত বশির উদ্দিন মন্ডলের পুত্র মো. মাহাবুব আলম মন্ডলকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার তিনকোনা পুকুরপাড় নামক এলাকায় আসামীর মেয়ে ঊর্মি আক্তারের ভাড়াটিয়া বাসা হতে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আর একই অপরাধে অভিযুক্ত আসামী মো. শহর আলী, মো. জাফর আলী, মো. নুরুজ্জামান আকন্দ ও মো. আব্দুর রশিদ ওরফে বদ্দি (৭২)কে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। আর একই অপরাধে অভিযুক্ত উপজেলার বাতিকুড়া গ্রামের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু বাক্কার পলাতক অবস্থায় চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ফুলপুর পৌরসভার গোদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আসামী আনোয়ার হোসেন ওরফে বিহারী ও ভাইটকান্দি ইউনিয়নের রবিরমারা গ্রামের বাসিন্দা এবিএম জিয়াউল হক ওরফে বদরু পলাতক রয়েছে। তাদেরকে খুঁজছে পুলিশ।