নাসিম উদ্দীন কুৃষ্টিয়া :
বাঙালীর৭ই মার্চ বাঙালীর স্বাধীনতা ঘোষণার সূতিকাগার আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ।বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনে দিনটি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ব ইতিহাসেও দিনটি অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবক্তা, বাঙালী জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা, বাঙালীর রাখাল রাজা, মুকুটহীন সম্রাট, বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্হিতিতে তাবেদারি পাক সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন,শাসন, শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদে বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য জ্বালাময়ী ভাষণ দেন যা আজও বাঙালীর ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগ্রত করে, শিরা উপশিরাগুলো জাগ্রত হয়।যে ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে ৮ম স্হান অধিকার করে আছে।১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ব্রিটিশ শাসন শোষণ শেষে স্বাধীনতা লাভ করে স্বাধীন ভারত ও স্বাধীন পাকিস্তান নামক দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়।অধিকন্তু সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু জাতীগোষ্ঠী নিয়ে ভারত এবং সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম জাতীগোষ্ঠী নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে ১২০০ মাইল দূরের পাকিস্তানের সহিত আমাদেরকে আমাদেরকে যুক্ত করে দেয়া হয়।সৃষ্টির প্রারম্ভেই অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে পাক জান্তা সরকার আমাদের ভাষার উপর কুঠারাঘাত করে।সারাদেশে ছাত্র বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় যা ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী সালাম,বরকত,জব্বার, রফিক শফিক সহ নাম না জানা অনেককেই জীবন দিতে হয়।এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে স্বৈরাচার জেনারেল আইয়ুব খানের পতন আন্দোলন, ১৯৬২ – ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করেও রাষ্ট্র শাসনের ক্ষমতা না দেয়া ইত্যাদি কারণে বাঙালীদের হৃদয়ের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ বাড়তে থাকে।সারাদেশ উত্তাল হয়। পাক বিরোধী আন্দোলন, সংগ্রাম জোরদার হয়।আন্দোলন দমাতে পাক সরকার সেদেশ থেকে এদেশে বাড়তি সেনা জড়ো করতে থাকে। এমনি করেই যুদ্ধের দামামা অবশ্যাম্ভাবী হয়ে ওঠে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পুর্ব বাংলার আনাচে কানাচে আওয়ামী সংগঠন সহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরী বৈঠক করে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচী ঘোষণা করে। যুদ্ধ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়ায়।এভাবেই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের জন্ম হয়।যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি।বাঙালীর দিনে দিনে জমে থাকা ক্ষোভ বিস্ফোরণের বহিঃপ্রকাশ।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বাঙালীজাতী মনে প্রাণে দারুণ উজ্জিবিত হয়।প্রদত্ত ভাষণ বিশ্লেষণ করলে স্বাধীনতার ঘোষণা,প্রস্তুত থাকার বিষয়, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহবান, খাজনা ট্যাক্স না দেয়ার ঘোষণা,হরতাল পালন করার ঘোষণা,রেডিও,টেলিভিশনে না যাওয়া, সরকারি কর্মচারিদের আদেশ করা,অফিস আদালত বন্ধের ঘোষণা ইত্যাদিতে পুরোটাই যুদ্ধের ঘোষণা স্পষ্ট হয়।এতদসব কারণে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, ৭ই মার্চ বাঙালীর স্বাধীনতা ঘোষণার সুতিকাগার।