পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরে শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে শুরু হয়েছে জুয়া। মেলায় ‘উঠাও বাচ্চা’ নামক লটারীর টিকিট বিক্রি করে লোভনীয় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের পকেট ফাঁকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি জুয়ারি চক্র।পিরোজপুরে শুরু হওয়া শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে জুয়া বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শুক্রবার (২০ জুন) জুমার নামাজ শেষে পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে শহরের বিলাশ চত্বরে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামান শেখ রাহাত, কমল একাডেমির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইনুল আহসান মুন্না, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ডি বদিউজ্জামান শেখ রুবেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক বদরুদ্দোজা এমাদুল হক মাসুদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান গাজী ইমু প্রমুখ। এ সময় বক্তারা শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির টিকিট বিক্রির নামে জুয়া বন্ধের দাবি জানান। তারা বলেন, সারাদেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় পিরোজপুরে মেলার নামে জুয়ার আসর বসিয়ে শিশু, কিশোর, যুবকদসহ সাধারণ মানুষদের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর দু’তিন দিন পরই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে, এ সময় এই মেলা ও জুয়া চলতে থাকলে পড়াশুনায় যেমন ক্ষতি হবে তেমনি বেড়ে যাবে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। অবিলম্বে বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে জুয়া বন্ধ করা না হলে বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তৌহিদী জনতা। বিক্ষোভ মিছিলে ও পথসভায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন থেকে পিরোজপুর শহরতলীর রানিপুর নামক স্থানে শুরু হয়েছে শিল্প ও বানিজ্য মেলা। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে মেলা আয়োজনের মুখ্য বিষয় হচ্ছে টিকিট বিক্রির নামে এক ধরণের জুয়া। জানা গেছে, মেলার আয়োজকদের বিরাট অংকের অর্থ দিয়ে মাসব্যাপী এ জুয়া পরিচালনা করছে একটি জুয়ারি চক্র। প্রতিদিন পিরোজপুর জেলার উপজেলাগুলোসহ পাশ্ববর্তী বাগেরহাট, ঝালকাঠী জেলায় কয়েক’শ অটোরিক্সায় মাইকিং করে বিক্রি করা হয় লটারীর টিকিট। মোটর সাইকেল, স্বর্নের চেন, গরু, পালং খাটসহ বিভিন্ন লোভনীয় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার এ লটারীর টিকিট বিক্রি করছে চক্রটি। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গনসহ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে বসে বিক্রি করা হচ্ছে লটারীর টিকিট। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার লটারিীর টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। পরে প্রতি রাত ১০টার পরে মেলা প্রাঙ্গনে করা হয় ‘উঠাও বাচ্চা’ হিসেবে পরিচিত এ লটারীর ড্র।জানা গেছে, লটারীতে ঘোষণা দেওয়া ৫৯টি পুরস্কারের মধ্যে দু-একটি দামীয় পুরস্কার দিলেও অন্য সব পুরস্কারই দেওয়া হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া মাঝে মধ্যে লটারীর ড্র না করেও লটারী বিক্রির পুরো টাকা হজম করে ফেলে জুয়ারি চক্রটি। গত ২০২৪ সালে একই চক্রটি পিরোজপুরের রানিপুরে এভাবে মেলার আয়োজন করে মেলার শেষের দিকে লটারীর টিকিট বিক্রি করে কোন লটারীর ‘ড্র’ না করেই সমস্ত টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে মেলা প্রাঙ্গন থেকে পালিয়ে যায়।মেলায় প্রবেশ টিকিট বিক্রির নামে জুয়ার বিষয়ে পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবির বলেন, শিল্প ও বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করার জন্য মেলার আযোজন করা হয়েছে। তবে সেখানে প্রবেশ টিকিট বিক্রির নামে যদি কোন জুয়ার আয়োজন করা হয় সেটা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মেলায় এ জাতীয় আয়োজন বন্ধ করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে প্রশাসনের সাথেও মেলার ইভেন্ট আয়োজনকারীদের সাথে বৈঠক হয়েছে। লটারির নামে জুয়া বন্ধ করা হচ্ছে।