মোঃ কামরুল ইসলাম খান ফুলপুর প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ পুলিশকে আমরা অনেকটা নিষ্ঠুর হিসেবেই জানি। অনেক সময় পুলিশকে নিষ্ঠর আচরণ করতে হয়। করতে বাধ্য হয় পুলিশ। চোর বাটপার বা সমাজের মন্দ লোকদেরকে শায়েস্তা করার লক্ষ্যে একটা পর্যায়ে তাদেরকে হয়তো নিষ্ঠুরতামূলক আচরণ করতে হয়। তাই বলে সবাই কিন্তু নিষ্ঠুর নয়। ব্যতিক্রমও আছে। আমার মনে হয় এসআই জাহিদ হাসান ও একজন ব্যতিক্রম ও মানবিক পুলিশ অফিসার। শেরপুর জেলার নকলায় উনার বাড়ি।অনেক স্মার্ট একজন পুলিশ অফিসার। তিনি একসময় আমাদের ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ধোবাউড়া থানায় কর্মরত আছেন। খুব মিশুক প্রকৃতির একজন মানুষ।ছদ্মবেশ ধারণ করে বহু দূর দূরান্ত থেকে তার বহু দুর্ধর্ষ আসামি ধরার গল্প রয়েছে। আমরা জানি। তিনি একজন দক্ষ যোগ্য ও সাহসী পুলিশ অফিসার। অনেক দক্ষতা আছে তার। বয়স, বডি ল্যাংগুয়েজ ও দক্ষতায় তিনি আর দশজনের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। তার কারণে ভণ্ড, প্রতারক, মদখোর, গাঁজাখোর ও অপরাধীরা আতঙ্কে থাকে। খুবই চৌকান্না অফিসার জাহিদ হাসান সবুজ। পথচলার সময় তিনি শুধু আসামি খোঁজেন না বরং অসহায় অসংলগ্ন মানুষের প্রতিও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।ভাইটকান্দি বাজারে একবার কয়েকজন গরিব মানুষ তার নজরে পড়ে। তারা মাছ বাজারে বড় মাছ দেখে ঘুরান পারতেছিলেন আর কেনার জন্য আফসোস করছিলেন। বার বার যাচ্ছিলেন মাছগুলোর কাছে কিন্তু কেনার মত সামর্থ্য তাদের ছিল না। দূর থেকে বিষয়টি এই এসআই জাহিদের নজরে পড়ে। পরে তিনি তাদের সাথে মিশে কথা বলেন এবং তাদের মনের আকুতি শুনে ও বুঝে মাছগুলো কিনে দিয়েছিলেন। পুলিশের নিকট থেকে বড় মাছ পেয়ে বৃদ্ধ তিনজন তখন কী যে খুশি হয়েছিলেন তা লিখে বুঝানো যাবে না।এরকম গল্প উনার আরও আছে। তবে আজ আমরা বলবো অন্য একটি গল্প। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাতে উনার ডিউটি ছিল। থানা এলাকায় ডিউটি করার সময় হঠাৎ কাপড় চোপড়বিহীন উলঙ্গ পাগল একজন মানুষ তার গাড়ির সামনে আসে। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে একটি গামছা দিয়ে তার শরীরটা ঢেকে দেন। এরপর একটু একটু করে তার হালাত জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। নাম কি? বাড়ি কোথায়? উলঙ্গ কেন? খেয়েছেন কি? কি খাবেন? ইত্যাদি।অবশেষে মুখখোলে লোকটি। সে বলল, পুলিশ ভাই! আমি একজন ব্যাংকের অফিসার ছিলাম। পারিবারিক অশান্তির কারণে আমি পাগল হয়ে গেছি। খুব খিদায় দিন কাটতেছে। আমি উলঙ্গ হয়ে ঘোরাঘুরি করি বলে কেউ আমারে খাবার দেয় না। শুধু মারে। নিরুপায় হয়ে ডাস্টবিনের খাবার কুঁড়িয়ে খাই। এসআই জাহিদ বলেন, কি খাবেন? সে বলল ভুনা খিচরি খাব। পরে তিনি তার জন্য ভুনা খিচুরির ব্যবস্থা করেন। লোকটি পেট ভরে খেল।এরপর আস্তে আস্তে তার কাছ থেকে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেন জাহিদ। জানা যায়, পারিবারিক অশান্তির কারণে পাগল বনে যাওয়া ওই লোকটির নাম মহিউদ্দিন (৪৫)। দিনাজপুর জেলার শ্রীবন্দর থানায় তার বাড়ি। ঠিকানাটা বলার পর সে হঠাৎ ছটফট করতেছিল। পরে এসআই জাহিদ তাৎক্ষণিক শ্রিবন্দর থানার ডিউটি অফিসারকে কল দেন এবং এই ব্যক্তির ছবি দেখান। অবশেষে ডিউটি অফিসার মহিউদ্দিনের ছোট ভাইয়ের ঠিকানা দেন। এরপর এসআই জাহিদ তার ভাই সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মহির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন। হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিয়ে ম্যানেজারকে তার বড় ভাই মহিউদ্দিনের ছবি দেখালে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন এটাই তার বড় ভাই। আজ ৪২ দিন ধরে দিনাজপুর হতে সে নিখোঁজ।পরে ছোট ভাই ব্যাংক ম্যানেজার মহির উদ্দিন দ্রুত আসে তার নিখোঁজ বড় ভাইকে বুঝে নিতে। ঘটনাস্থলে আসার পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁদতে লাগল। খুবই হৃদয় বিদারক ঘটনা। সে দৃশ্য বুঝাবার মত নয়। পরবর্তীতে এসআই জাহিদ উদ্ধারকৃত ভাইটিকে একটি টি শার্ট ও একটি প্যান্টের ব্যবস্থা করে দিয়ে তার ছেট ভাইয়ের কাছে বুঝিয়ে দেন। আসলে পুলিশে যারা কাজ করেন তারা শুধু নিষ্ঠুরতাই করেন না বরং এরকম বহু মানবিক কাজও প্রায়ই করে থাকেন। দোয়া রইলো এসব মানবিক পুলিশদের জন্য আর সবার উদ্দেশ্যে বলবো, পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহনশীল হন। এমন নিষ্ঠুর আচরণ কেউ করবেন না যে, আপনার আপনজন মহিউদ্দিনের মত এরকম পাগল বনে যায়; দেশছাড়া হয়ে যায়!