বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ায় সেটির নাম হয়েছে হামুন।হামুন নামটি ইরানের দেওয়া। যার অর্থ হচ্ছে সমতল ভূমি বা পৃথিবী।বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর সেটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং এখন উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।চট্টগ্রাম, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।সন্ধ্যায় ৬টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৬৩০ কিলোমিটার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্বে অগ্রসর হয়ে আরও ঘণীভূত হতে পারে।ঘূর্ণিঝড় বর্তমান গতিতে এগোতে থাকলে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ভারতের আবহাওয়া দফতরের বুলেটিনে এর আগে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সেটি বুধবার বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়া উপজেলা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী উপকূল অতিক্রম পড়তে পারে।এটি বাংলাদেশে আঘাত করলে সেটি হবে চলতি বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়।এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছিল।আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন,” ঘূর্ণিঝড়টি ১০/১২ কিলোমিটার গতিতে ক্রমশ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।তবে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আরও সময় গেলে সেটার শক্তি বা গতিপথ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।”আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় অনেক সময় এর গতিবেগ ও গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে বা একই জায়গায় আবর্তন করতে পারে।সুতরাং উপকূল অতিক্রমের সময় এদিক ওদিক হতে পারে।উপকূলের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।বঙ্গোপসাগরের বেশিরভাগ এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুই-তিন দিন চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকা সেইসাথে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হতে পারে।উপকূলবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে।এদিকে সাগরে সতর্ক সংকেত দেয়ার পরপরই ঝালকাঠি, বরগুনার পাথরঘাটা,পিরোজপুরে কাউখালী উপজেলায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা ও স্হানীয় প্রশাসন।তারা নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করে বলছেন, সতর্কবার্তা বাড়ার সাথে সাথে এই এলাকার মানুষ যেন আশেপাশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চলে যান।ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা সমুদ্র উপকূলের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকায় এই আগাম প্রচারণা শুরু করে তারা।গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাস একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।বাংলাদেশের মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
সূত্র:BBC News, বাংলা