কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি :
কোন কাজ না করে শুধু মোবাইলে ১০ মিনিট বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিদিন শত-শত টাকা আয় করার লোভ দেখিয়ে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সাধারণ মানুষের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসটিএলএস ও এসএ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দুটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করতো।অ্যাপের মাধ্যমে এসটিএলএস ও এসএ প্রতিষ্ঠান দুটিতে কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক – শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিসহ ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রতিষ্ঠান দুটি প্রথমে এলাকার কয়েক জনকে বেতনে নিয়োগ দিয়ে তাদের মধ্যে গ্রাহক সংগ্রহ করে। তাদের টার্গেট পূরণ হয়ে যাওয়ার গত ১৫ দিন ধরে উধাও হয়ে যায় এসটিএলএস ও এসএ প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ। একরাতেই সর্বশান্ত হয়ে যায় উপজেলার ৫ শতাধিক মানুষ। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সূত্রে জানাযায়, বিদেশী এই অনলাইন বিনিয়োগের প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠান দুটির অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে ১৬ শত থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারতেন গ্রাহকরা। এসটিএলএস এর যেসব গ্রাহক ২২ শত টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতেন তারা প্রতিদিন ৫ টি ভিডিও বিজ্ঞাপণ দেখে ৭৫ টাকা, ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগে ১০টি ভিডিও দেখে ৩৭৫ টাকা, ৩৫ হাজার টাকা বিনিয়োগে ১৫ টি ভিডিও দেখে ১২৭৫ টাকা আয় করতেন। একই ভাবে এসএ অ্যাপে ১৬ শত টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে প্রতিদিন ১০টি বিজ্ঞাপন ভিডিও দেখে ৫৫ টাকা, ৮৭০০ টাকায় ২০টি ভিডিও দেখে ৩২০ টাকা, ২৯৭০০ টাকায় ৩০ টি ভিডিও দেখে ১১২০ টাকা আয় করতেন।এছাড়া যদি কোন গ্রাহক ২০ জন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে যুক্ত করেন তা হলে ওই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে প্রতি মাসে অন্তত ১২ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে একটি নিয়োগ পত্র দেন প্রতিষ্ঠানটি।এভাবে যে যত বেশি গ্রাহক তৈরি করতে পারবেন তার বেতন তত বেশি হবে।কাউখালীতে এসটিএলএস নামের প্রতিষ্ঠানে সর্বচ্চ গ্রাহক যুক্ত করে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পান উপজেলার আমরাজুড়ি এলাকার আল আমিন। তার নির্ধারিত বেতন ছিল মাসে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি প্রতি গ্রাহকের আয় থেকেও একটা কমিশন পেতেন।এই আল আমিনের স্ত্রী পিংকিও ছিলেন একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী।মুলত এরাই প্রথমে কাউখালীর সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইন অ্যাপে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরেন। আল আমিন ছাড়াও এসটিএলএস কোম্পানিতে ১০০ জন এবিসি কর্মচারী নিয়োগ করে মোঃ সাইমুন ইন্টার্ন সুপারভাইজার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে মাসে ২৫ হাজার টাকা, তুহিন আলম ও সামিয়া ২০ জন করে গ্রাহক সংগ্রহ করে টিম লিডার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন বলে জানাযায়। এদের মতন উপজেলায় ১৫/২০ জনকে বেতন ভুক্ত কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রতিষ্ঠান দুটি। এরা গ্রাহকদের লোভের ফাঁদে ফেলে অ্যাপটি প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে পৌঁছে যায়। তাদের ফাঁদে পড়ে উপজেলার শিক্ষক – শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সরকারি – বেসরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দিনমজুর সহ বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ করেন।কোম্পানি দুটির তাদের টার্গেট পূরণ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়।এসটিএলএস কোম্পানির বেতন ভুক্ত সুপারভাইজার কাউখালীর মূল অপরাধী আল আমিন ও তার স্ত্রী পিংকি কোম্পানিটি উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। সুশীল সমাজ বলছেন মানুষের অতিলোভ আর প্রশাসনের এবিষয়ে নজরদারি না থাকার কারণেই এসব ঘটছে।