নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ দিনের পর দিন বন্ধ থাকে কমিউনিটি ক্লিনিক। দায়িত্বরতরা রাজনীতিসহ নানা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এদিকে সেবা না পেয়ে স্থানীয় রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্যত্র গিয়ে চিকিৎসা নেন।
এমন খবরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের কমলপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শনে যান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা খাতুন।
তিনি গিয়ে ক্লিনিকটি তালা লাগানো দেখতে পান। এছাড়া হাজিরা খাতায় দীর্ঘদিন অনুপস্থিত দেখতে পান দায়িত্বরতদের। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে ময়লা দুর্গন্ধ দেখতে পান। অনেক দিন ধরে ক্লিনিকটি খোলা হয়নি বলে তথ্য পান। এছাড়া হাজিরা খাতায় দীর্ঘদিন কারও স্বাক্ষরও পাননি।
এ নিয়ে ডা. মাহমুদা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সাথে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কমলপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে কাগজে-কলমে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। একজন কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। সিএইচসিপি মূলত ক্লিনিকটির সার্বিক দেখাশোনা করেন। স্বাস্থ্য সহকারী শিশুদের বিভিন্ন টিকা দানসহ অন্যান্য কার্যক্রম করেন। এছাড়া পরিবারকল্যাণ সহকারীর কাজ গর্ভবতীদের কাউন্সেলিং, বিভিন্ন ওষুধ বিতরণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। অথচ তারা সপ্তাহে এক দিন ক্লিনিকই খোলেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে আরও জানা গেছে, ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে রয়েছেন আল মুলকী। ক্লিনিকটি খোলা ও সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁর। মুলকীর বাড়ি ওই ক্লিনিকের ৫০ গজের ভেতরে। তবু সপ্তাহে তিনি একদিনও ক্লিনিক খুলেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, আল মুলকী উপজেলা সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের সভাপতি, উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ‘আমরা মুক্তি যোদ্ধার সন্তান’ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া স্থানীয় ডিশ ব্যবসার সাথে তিনি জড়িত রয়েছেন।
কলমপুর বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এ গ্রামের মানুষ চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে পারে না। হাওরপাড়ের মানুষের চিকিৎসার জন্য এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনিকটি কাউকে কোনোদিন খুলতেই দেখি না। সাধারণ মানুষ জানেই না এখানে ওষুধ দেওয়া বা চিকিৎসা হয়। তাই কেউ এখন আর এ ক্লিনিকে আসে না।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিএইচসিপি আল মুলকীকে বারবার তার মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা খাতুন বলেন, সিএইচসিপি আল-মুলকী কখনই ক্লিনিকটি ঠিকমতো খুলেন না। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে। এসব কারণে এ পর্যন্ত কয়েকবার তার চাকরি যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। তবুও শুধরায়নি।
তিনি বলেন,আমি মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ পাই। এমনকি দীর্ঘদিন না খোলার বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছি। হাজিরা খাতায় দীর্ঘদিন স্বাক্ষর না করার প্রমাণ পেয়েছি। অন্যদেরও সতর্ক করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।