মোঃ নাসিম উদ্দিন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জগশ্বরের স্কুল ছাত্র নিশাতের লাশ উদ্ধার ঘটনার সময় পেরিয়ে গেছে ৬ বছর। স্কুলের পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধারের পর প্রথমে এটিকে পানিতে ডুবে মৃত্যু বলে মনে করা হয়েছিল। পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম এর জন্য পাঠানো হয়।নিশাতকে কারা কিভাবে হত্যা করেছে তার কোন চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলনা, আজও নেই। পরবর্তীতে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে হত্যার বিষয়টি সামনে আসে এবং ভেড়ামারা থানায় হত্যা মামলা হয়। যে মামলাটি নিশাত হত্যা মামলা নামে পরিচিত যাহার নম্বর ১১ তারিখ ১৪/৫/২০১৭।নিশাতকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এমন ধারণায় বাদি-নিশাতের বাবা বর্তমানে মৃত সাজেদুল করিম বিদ্যুত মাষ্টার অথবা বাদী পক্ষের দিকনির্দেশনা মোতাবেক তৎকালীন সময়ের র্যাব ও থানা পুলিশ সমান্তরাল ভাবে এই ঘটনাটির তদন্তে নামেন। এই মামলার একজন সন্দেহভাজন শাহেদকে আটক করে তাকে RAB ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাহেদকে ছেড়ে দেয়া হয়। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসাবে এক টুকরা সাদা কাপড়ের অংশবিশেষ, এক টুকরা নেভিব্লু রং এর জিন্স প্যান্টের কাপড়ের অংশ এবং কালো রঙের এক টুকরা আন্ডার প্যান্টের কাপড় জব্দ করেন প্রথমদিকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।লাশ উদ্ধার কালে ভেড়ামারা থানার এসআই মোহাম্মদ আবু তাহের জিডির তদন্তভার পান। তিনি লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। নিহত নিশাত জগশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ছিল।তার লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি ভেড়ামারা উপজেলা তথা কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে ব্যাপক আলোচনার খোরাক হয়ে ওঠে।এটি একটি হত্যাকাণ্ড হলে সবাই এর সুবিচার প্রত্যাশা করেন ও দোষীদের আইনানুগ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন- সাংবাদিক সম্মেলন সহ তৎকালীন সময়ে ব্যাপক আলোড়নে সৃষ্টি হলেও প্রথম দিকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করতে এসে নিশাতের হত্যার বিষয়ে কোন কিছুই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এভাবে একজন- দুইজন- তিনজন -চারজন -পাঁচ জন তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলিয়ে এক পর্যায়ে এসআই নিরস্ত্র প্রতাপ কুমার সিংহ বিপি নম্বর ৮৪১৩১৪৭৭৯৬৪ এই মামলার তদন্তভার পান।তদন্তকালে তিনি সন্দিগ্ধ আসামি মোঃ মাহফুজুর রহমান ওরফে তুষার (১৯) পিতা- মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সাং মাওলা হাবাসপুর থানা ভেড়ামারা জেলা কুষ্টিয়াকে হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর ১/১ /২০২০ তারিখে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে প্রেরণ করেন। এরপর এস আই হাবিবুর রহমান মামলাটির তদন্ত কালে মামলার সন্দিগ্ধ আসামি শাহেদ হাসান (১৯) পিতা- মোহাম্মদ সান্টু কাজী, থানা ভেড়ামারা জেলা কুষ্টিয়াকে ২৬/১১-২০২০ তারিখে গ্রেফতার করে পরদিন বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের দীর্ঘ অনুসন্ধানে ও তাদের হাতের লেখা বিভিন্ন প্রকাশনা মাধ্যমের লেখা পর্যালোচনা করে জানা যায় উক্ত ২ গ্রেফতারকৃত সম্পৃক্ত আসামির বিষয়ে এলাকায় কানাঘুষা ছিল।
কিন্তু এই দুই আসামিকে বাদ দিয়ে ভেড়ামারা থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য, নং ৬ তারিখ ২৯/ ৭ /২০২১ খ্রিস্টাব্দ ধারা ৩০২/ ২০১ প্যানেল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। মিডিয়া সোচ্চার হয় এবং আইনগত ভাবে বাদীপক্ষ এর নারাজি দেন। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পুনঃ তদন্তের জন্য মামলাটি আরেকজন কর্মকর্তার উপরে ন্যস্ত করা হয়।পরবর্তীতে আরো তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান বি পি নম্বর ৬৯৯৩০৩৯৫৬০ পিবিআই কুষ্টিয়া। তিনি আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে বাদীর ধারণাকৃত আসামি মাহফুজুর রহমান তুষার (১৫) পিতা মোঃ হেলাল উদ্দিন শাহ মাওলাহাবাসপুর থানা ভেড়ামারা জেলা কুষ্টিয়া কে অব্যাহতি দান করে অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেন। পক্ষান্তরে প্রবাসী নির্দোষ বলে দাবি কৃত এবং ঘটনার সময় এলাকায় ঘটনার পরবর্তী চার বছরে কোন ধরনের নাম উচ্চারিত না হওয়া মোঃ ওয়াসিম হোসেন (৩৫) পিতা মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন স্কুল পাড়া সহ ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে নাম আসা মোঃ শাহেদ হাসানের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৩০২/২০১/৩৪ ধারার অপরাধ হয়েছে উল্লেখ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র ও দোষীপত্র দাখিল করেন।কোন জায়গায় এক বিন্দু নাম না থাকলেও ছাই দিয়ে দড়ি পাকানোর মত অভিযোগ পত্রে তার নাম আশায় চরম বিস্মিত হতচকিত হয়ে পড়েছেন প্রবাসী ওয়াসিম। তিনি ভেড়ামারা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে তার দুরাবস্থার বিষয়টি অনুসন্ধান করে নিশাত হত্যা মামলার সাথে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন সেই সাথে কোন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে আইনের কষাঘাতে পড়ে জীবনের চরম মূল্য দিতে না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হন। ওয়াসীম বলেন তার নাম এজাহারে নেই। ঘটনার সময় তিনি ঢাকাতে ছিলেন। ঘটনার পরে তিনি ঢাকা থেকে এসে নিশাতের কবরস্থানেও যান। পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারত যান,এই ভারত যাওয়ার ঘটনাটি ও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।তবে কেউ ভারত গেলে ঘটনার সাথে জড়িত ভারত না গেলে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন কোন সিদ্ধান্তে আসা সমীচিন নয় বলে বোদ্ধারা মনে করেন। অসীম একজন প্রবাসী এবং পারিবারিকভাবে বেশ সচ্ছল। তার এই সচ্ছলতার কারণে তার টাকা-পয়সার দিকে লোভ পড়েছে কুচক্রী মহলের। আর এ কারণে মামলাটি চলাকালীন সময়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর ওৎ পেতে থেকে যখন মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়ে গেছে। তারপরে নারাজীর কারণে কোন তদন্ত এর ব্যবস্থা হয়েছে। সেই তদন্তের অভিযোগ পত্রে ওয়াসিমের নাম আসায় সবাই বিস্মিত হয়েছে কারণ ঘটনার আগেও পিছে কোন জায়গাতেই ওয়াসিমের কোন নাম ছিল না। আর আগেই বলা হয়েছে ১৮ কোটি গণমানুষের এই দেশে কেউ মেধাবী স্কুল ছাত্র নিশাতকে হত্যা করার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেনি হত্যা স্থল থেকে অনেক দূরে ভাসমান অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।পক্ষান্তরে একজনও নির্দোষ ব্যক্তি যাতে এই মামলায় কাল্পনিক কাহিনীর উপর ভর করে জড়িয়ে না যায় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করবার জন্য রাষ্ট্রের বিবেকবান লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সর্বস্তরের মানুষ।